শেষ ফ্লাইট

প্লেন ক্র্যাশ (সেপ্টেম্বর ২০২৫)

Mesbah Shahriar
  • 0
  • ১০৮
ঢাকার ভোর তখন কেবল ফুঁড়ে উঠছে। গ্রীষ্মের সকাল হলেও রানওয়ের বাতাসে হালকা শীতলতা।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বেসে দিনের প্রথম আলোতে সবুজ-ধূসর রঙের যুদ্ধ বিমানগুলো চকচক করছিল।
স্কোয়াড্রন লিডার আরিফ মাহমুদ ধীরে ধীরে হ্যাঙ্গারের দিকে হাঁটছিলেন, হাতে হেলমেট, কাঁধে পাইলট স্যুটের প্যাচে লাল রঙের স্কোয়াড্রন এমব্লেম ঝলমল করছিল।
আজ ছিল তার জন্য আরেকটা সাধারণ প্রশিক্ষণ মিশন। কিন্তু সামান্য ভিন্ন — নতুন একদল জুনিয়র পাইলটের জন্য আকাশে কৌশল প্রদর্শন আর মুভমেন্ট শো করা ছিল তার কাজ।
তার স্ত্রী মায়া সকালে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন,
— "আজ কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরো। নায়লার স্কুলের প্যারেন্টস মিটিং আছে, তোমাকেও দেখতে চায়।"
আরিফ হাসি দিয়ে জবাব দিয়েছিলেন,
— "প্রতিশ্রুতি দিলাম, আজ সময়মতো ফিরব।"
হেলমেট পরে ককপিটে বসে তিনি একবার চারপাশে তাকালেন। রানওয়ের প্রান্তে সূর্য লালচে হয়ে উঠছে, দূরে টাওয়ারের ছায়া। হেডস-আপ ডিসপ্লেতে সবুজ লাইনগুলো ঝিকমিক করছে।
"ক্লিয়ার ফর টেকঅফ" সংকেত আসতেই Chengdu FT-7BGI–এর ইঞ্জিন গর্জে উঠল, শব্দ যেন বুক কাঁপিয়ে দেয়।
প্রথম ১৫ মিনিট সব ঠিকঠাক ছিল। আকাশ নীল, মেঘ তুলোর মতো ছড়ানো। হঠাৎ—
টক টক টক…
ককপিটে কাঁপুনি, তারপর লাল আলো ঝলকানি।
ENGINE FAILURE — লেখা স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে।
আরিফ তৎক্ষণাৎ কন্ট্রোল টাওয়ারে কল করলেন,
— “মে ডে, মে ডে… স্কোয়াড্রন লিডার আরিফ রিপোর্টিং। ইঞ্জিন ফেলিওর, উচ্চতা কমছে দ্রুত।”
টাওয়ার:
— “রজার, ইজেক্ট করার প্রস্তুতি নিন। পুনরাবৃত্তি করছি — ইজেক্ট করুন!”
কিন্তু তখনই তার চোখ নিচের দিকে আটকে গেল।
তার নীচে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, আর তার মাঝখানে একটি বড় স্কুলের মাঠ — ছাত্রছাত্রীদের ভিড়, সকালের অ্যাসেম্বলি চলছে।
যদি সে এখনই ইজেক্ট করে, নিয়ন্ত্রণহীন বিমান সরাসরি সেই মাঠে বিধ্বস্ত হবে।
সেকেন্ডের ভেতর মনে পড়ে গেল নিজের মেয়ের মুখ — নায়লা। স্কুল ড্রেসে হাসিমুখে “বাবা” বলে দৌড়ে আসা ছোট্ট কণ্ঠস্বর।
সে নিজের সাথে নীরবে বলল,
— "না… আমি অন্যদের বাচ্চাদের কাঁদতে দেব না।"
আরিফ স্টিক শক্ত করে ধরে বিমানটিকে জোর করে বাম দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। ইঞ্জিনের গর্জন ক্রমেই নিস্তব্ধ হচ্ছে, গতি কমে আসছে, কিন্তু তাকে এখনো খালি মাঠে পৌঁছাতে হবে।
হাতের তালু ঘামে ভিজে গেছে, হেলমেটের ভেতর শ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে।
টাওয়ার থেকে আবার ডাক আসছে,
— “ইজেক্ট করুন, আরিফ! খুব দেরি হয়ে যাবে!”
— “নেগেটিভ, আমি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছি।”
তিনি জানেন, এই কথার মানে — নিজের জীবনের সম্ভাবনা শূন্যে নামিয়ে আনা।
কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলানোর সময় নেই।

খালি মাঠ চোখের সামনে আসতে না আসতেই আবারও এক ধাক্কা। ডানার এক পাশে হঠাৎ আগুন ধরে গেছে, জ্বলে ওঠা তেলের গন্ধ ককপিটে ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি স্টিক টেনে বিমানটিকে যতটা সম্ভব উঁচুতে তুললেন, যেন নিচের বাড়িগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন।
শেষ মুহূর্তে বিমানটি দিক পরিবর্তন করল, কিন্তু উচ্চতা এত কমে গিয়েছিল যে একটি বহুতল ভবনের কোণ ছুঁয়ে গেল।
ভয়াবহ বিস্ফোরণ — আগুন, ধোঁয়া, আর শকওয়েভে চারপাশ কেঁপে উঠল।
টাওয়ারে তখন নিস্তব্ধতা। কেবল রেডিওতে ভাঙা শব্দ —
“…ওভার… মিশন… কমপ্লিট…”

পরদিন সকালে সব সংবাদপত্রে বড় অক্ষরে শিরোনাম —
“নিজের প্রাণ দিয়ে শতাধিক মানুষের জীবন বাঁচালেন স্কোয়াড্রন লিডার আরিফ মাহমুদ।”
ছবিতে কালো ধোঁয়ার পটভূমিতে ভাঙা ডানার ধ্বংসাবশেষ, আর সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন বাচ্চা।
মায়া সংবাদপত্র হাতে চুপচাপ বসে আছেন। পাশের ঘরে নায়লা খেলছে, কিছুই বুঝতে পারছে না।
সে মায়ার কাছে এসে বলল,
— “মা, বাবা কখন ফিরবে? আজকে আমার আঁকা দেখাতে হবে ওনাকে।”
মায়া শক্ত করে নায়লাকে জড়িয়ে ধরলেন। গলায় কোনো শব্দ আটকে থাকল না, শুধু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

দুই সপ্তাহ পরে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। সবার হাতে ছোট্ট পতাকা, গায়ে সাদা শার্ট।
মঞ্চে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বললেন,
— “তিনি ছিলেন সত্যিকারের বীর। শুধু আকাশের নয়, মানুষের হৃদয়েরও রক্ষক।”
ন্যাশনাল পতাকার পাশে একটি বড় ফ্রেমে রাখা আরিফের ছবি। চোখে সেই চেনা আত্মবিশ্বাস, ঠোঁটে হালকা হাসি।
আর নায়লা, ছোট্ট হাতে বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে — যেন ভাবছে, একদিন আকাশে উড়ে সে-ও বাবার মতো হবে।

আজও মাঝে মাঝে ঢাকার আকাশে যুদ্ধ বিমান উড়ে গেলে মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে শোনেন সেই গর্জন।
নায়লা বলে,
— “মা, দেখো! বাবা হাত নাড়ছে।”
মায়া কিছু বলেন না, শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
কারণ তিনি জানেন — কিছু গল্প কেবল আকাশই বলতে পারে…
আর কিছু বীর, শুধু আকাশেই বেঁচে থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি কারণ তিনি জানেন — কিছু গল্প কেবল আকাশই বলতে পারে… আর কিছু বীর, শুধু আকাশেই বেঁচে থাকে। ঃঃঃঃ শেষের কথা গুলো হৃদয় ছুয়ে গেলো। বেশ লিখেছেন। শুভকামন রইলো।
ভালো লাগেনি ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
আল আমিন দারুন
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
আল আমিন দারুন চেস্টা, চালিয়ে যান পাশে আছি
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মেহেদী মারুফ পাইলট তৌকিরের কাহিনী চোখের সামনে ভেসে এলো। সুন্দর গল্প লিখেছেন। শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ঢাকার ভোর তখন কেবল ফুঁড়ে উঠছে। গ্রীষ্মের সকাল হলেও রানওয়ের বাতাসে হালকা শীতলতা। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বেসে দিনের প্রথম আলোতে সবুজ-ধূসর রঙের যুদ্ধ বিমানগুলো চকচক করছিল।

০৮ আগষ্ট - ২০২৫ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
কবিতার বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৫